কিভাবে সঠিকভাবে কনডম ব্যবহার করবেন?

How to Use a Condom

অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং যৌন সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করার সবচেয়ে ভালো উপায় হল কনডম ব্যবহার করা। এটি ল্যাটেক্স রাবার অথবা প্লাস্টিক ( পলিইউরিন) দিয়ে তৈরি জন্মনিয়ন্ত্রক।

যখন কনডম কিনবেন তখন খেয়াল রাখবেন যেন সেটাতে “British Standards Institution (BSI) kitemark” অথবা ”European CE ” প্রতীক থাক যা মান যাচাইয়ের জন্য এবং কেনার সময় অবশ্যই মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ দেখে কিনুন।

দুই ধরনের কনডম রয়েছে 

১। নারীর ও ২। পুরুষের। তবে নারীদের কনডম বাংলাদেশে পাওয়া যায়না।

পুরুষদের কনডম: মিলনের সময় কনডম পুরুষ লিঙ্গে পরা হয় যেন বীর্য সঙ্গীর যোনীতে প্রবেশ করতে না পারে। কনডমটি পরতে হবে যখন পুরুষ লিঙ্গ উত্তেজিত থাকবে এবং সঙ্গীর দেহে প্রবেশ করার পুর্বে।

ব্যবহার পদ্ধতি: সাবধানে প্যাকেটটি খুলুন যেটার মাঝে কনডম টি আছে, খেয়াল রাখুন যেন তা ছিড়ে না যায়।

কনডম এর টিপ / উপরের ভাগ টি আপনার বুড়ো আঙ্গুল এবং তর্জনী দিয়ে ধরুন যেন ঠিক ভাবে প্রবেশ করে এবং কোন বাতাস যেন ভিতরে না থাকে। বাতাস থাকলে ছিড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

কনডম আস্তে আস্তে পুরুষ লিঙ্গের পুরা দৈর্ঘ্য জুড়ে পরুন । কনডম টি যদি না খুলে তবে বুঝতে হবে আপনি উলটো দিকে পরছেন । তখন আবার নতুন কনডম ব্যবহার করুন ।

খেয়াল রাখুন কন্ডম যেন ঠিক জায়গায় থাকে এবং মিলনের সময় খুলে আসলে আরেকটি নতুন কনডম ব্যবহার করুন।

বীর্যপাতের সময় পুরুষ লিঙ্গ যখন উত্তেজিত অবস্থায় থাকবে তখন কনডমকে ঠিক জায়গায় ধরে রেখে সম্পুর্ন লিঙ্গ সঙ্গীর যোনী থেকে বের করে আনুন। আপনি তখনি কনডম বের করে আনবেন যখন আপনার লিঙ্গের সাথে সঙ্গীর দেহের কোন স্পর্শ না থাকে। কনডমটিকে টিস্যুতে করে ডাস্টবিনে ফেলুন। কমডে ফ্লাশ করবেন না তাতে সেটির পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

নারীদের কনডম: এ ক্ষেত্রে নারীরা নিজেদের জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি নিজেরাই পছন্দ করতে পারে। এটি অবশ্য পুরুষ লিঙ্গ যোনী স্পর্শ করার পুর্বেই পরতে হবে।

ব্যবহার পদ্ধতি: সাবধানে প্যাকেটটি খুলুন যেটার মাঝে কনডমটি আছে, খেয়াল রাখুন যেন তা ছিড়ে না যায়। বন্ধ দিকটি নিজের তর্জনী বা বুড়ো আঙ্গুলের মাঝে ধরুন । যেখানে একটি পাতলা রিং আছে আরেক হাত দিয়ে যোনী উন্মুক্ত করুন ।

তারপর রিং টি যোণীতে প্রবেশ করান এবং মধ্য আঙ্গুল দিয়ে রিং এর মাঝে অংশ যোনির যতটুকু ভিতরে সম্ভব ততটুকু ভিতরে প্রবেশ করান । পাতলা রিংটি যোনীর জতটুকু বাইরের দিকে সম্ভব সেখানে রাখুন । খেয়াল রাখুন পুরুষ লিঙ্গ যেন যোনী এবং কনডমের মাঝ দিয়ে চলে যায়।

মিলেনের পর কনডমের শেষ অংশ ধরে কন্ডম বের করে আনুন । খেয়াল রাখুন কনডম যেন ছিড়ে না যায়। তাতে বীর্য দেহে প্রবেশ করতে পারে । এমন হলে ডাক্তারের পরামর্শে ইমার্জেন্সি পিল সেবন করুন।

আপনি যদি এটি ব্যবহার করে থাকেন তবে পানি জাতীয় ব্যবহার করুন । কারন তেল জাতীয় যেমন – লোশন ব্যবহারে কনডম ছিড়ে যেতে পারে।কনডম মিলনের সময় ছিড়ে গেলে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ইমার্জেন্সি পিল সেবন করুন । এছাড়া অন্যান্য জন্মনিয়ন্ত্রক পদ্ধতি ও ব্যবহার করতে পারেন । 

পুরুষদের কনডম : মিলনের সময় কনডম পুরুষ লিঙ্গে পরা হয় যেন বীর্য সঙ্গীর যোনীতে প্রবেশ করতে না পারে। কনডমটি পরতে হবে যখন পুরুষ লিঙ্গ উত্তেজিত থাকবে এবং সঙ্গীর দেহে প্রবেশ করার পুর্বে।

কনডম এর সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে কিছু টিপস

১) কনডমের প্যাকেটটি খুব সতর্কতার সাথে খুলতে হবে। সবসময় কনডম প্যাকেট এর যে কোন এক প্রান্ত থেকে খোলা ভালো। কারণ প্যাকেটটি খুলবার সময় যদি কনডমটি ভিতর থেকে কনডম ফুটা হয়ে যায় অথবা ফেটে যাই তাহলে কনডমটি সম্পূর্ণ ব্যবহার অনউপযোগী হয়ে যেতে পারে।

২) এবার কনডমটি প্যাকেট থেকে বের করবার পর খেয়াল রাখতে হবে, কনডমটি কোন পাশ থেকে রোল হবে। আপনি রোলিং পাশটি নিশ্চিত করবার জন্য একটি আঙ্গুল হালকা করে কনডমের রাবারের ভিতর প্রবেশ করে রোলিং পাশটি নিশ্চিত করতে পারেন।

৩) কনডম ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই ভিতরের বাতাস বের করে নিতে হবে অন্যথায় তা ফেটে গিয়ে শুক্রানু যোনিপথে প্রবেশ করতে পারে।

৪) এইবার আস্তে আস্তে হালকা ভাবে রোল করে কনডমটি আপনার গোপনঅঙ্গে পরিয়ে নিন।

৫) সম্পূর্ণ উত্তেজনা না হওয়া পর্যন্ত কনডম গোপন অঙ্গে না পরাই ভালো। কারণ উত্তজনা কম থাকলে পরবর্তীতে কনডম খুলে আসতে পারে।

৬) এইবার মিলন শেষে উত্থিত অবস্থায় লিঙ্গ বের করে নিয়ে আসতে হবে না হলে অনেক সময় শুক্রানু ছড়িয়ে পরতে পারে।

৭) মিলন শেষে ব্যবহারিত কনডম এর শেষ প্রান্তে হালকা ভাবে একটি গিট বাধে দেওয়া ভালো, যার ফলে শুক্রানু বাইরে প্রবেশ করবে না।

কনডম ব্যবহার শতকরা ১০০ ভাগ জন্মনিয়ন্ত্রনের নিরাপত্তা দেয়না। এর সাফল্যের হার ৯০% এর কাছাকাছি। নিয়ম মাফিক ব্যবহার না করলেই ব্যর্থতা দেখা দেয় । অনেক দম্পত্তির কনডমে এলার্জি থাকতে পারে তাদের কনডম ব্যবহার না করাই ভালো। দীর্ঘদিন কনডম ব্যবহার করলে অনেক সময় দম্পতিরা একধরনের মানসিক অতৃপ্তি এবং অশান্তিতে ভোগেন। কনডম ব্যবহারের সাথে সাথে প্রাকৃতিক জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি ব্যবহার করে স্বামী-স্ত্রী অনেক আরাম দায়ক যৌন জীবন উপভোগ করতে পারেন।

কনডম তৈরির উপাদান: কনডম অনেক উপাদান দিয়েই তৈরি হতে পারে। তবে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি কনডমের মেয়াদ খুব তাড়াতাড়িই শেষ হয়ে যায়। সিনথেটিক কোনো উপাদান দিয়ে কনডম তৈরি করা হলে তা বহুদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।

আমরা সচরাচর যে কনডমগুলো ব্যবহার করি, সেগুলো তৈরি করা হয় মূলত রাবার দিয়ে। তার মধ্যে থাকে পলিইউরিথিন বা ভেড়ার চামড়া বা পলিসোপ্রিন। গবেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে সিনথেটিক কনডমের মেয়াদ ৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে।

যে কনডম কিনবেন না: বাজারে অনেক ধরনের কনডম আছে, যেগুলো মূলত স্পার্মিসাইড ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। সেগুলো কেনা ঠিক নয়। কারণ এ ধরনের কনডম বেশিদিন স্থায়ী হয় না। তাই দোকান বা ফার্মেসি থেকে কনডম কেনার আগে সেই বিষয় মাথায় রাখা উচিত।

কনডমের মেয়াদ: ওষুধ থেকে শুরু করে অন্য চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত পণ্যগুলোর নির্দিষ্ট আছে। তেমনই কনডমেরও মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার বিষয় আছে। তাই কনডম কেনার সময় প্যাকেটটি ভালো করে খেয়াল করে দেখলেই জানা যাবে, এটার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ।

যেখানে কনডম রাখবেন: কনডম ঘরের যেখানে-সেখানে রাখা মোটেই উচিত নয়। তবে ঘরের বিছানার পাশের টেবিল, ওয়ালেট, পকেট- এমন সব জায়গায় কনডম রাখা নিরাপদ।

মনে রাখবেন, কনডম কখনো অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না। তাই ফ্রিজ বা রোদ ঝলমল করা জায়গায় একদমই রাখবেন না। কারণ খুব কম সময়ই এটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

মেয়াদোত্তীর্ণ কনডম নয়: কনডম মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও অনেকে তা ব্যবহার করেন। এতে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ সময় যত যাবে, ততই দুর্বল হতে থাকবে কনডমের মেয়াদ।

জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এ সময়ে মেয়াদোত্তীর্ণ কনডম ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, যা হিতে বিপরীত হতে পারে। এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।

(সংগৃহিত)

Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad