উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনশনরত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এ পর্যন্ত অসুস্থ হয়েছেন চারজন। চিকিৎসক এসে তাদের সেবা দিচ্ছেন।
- আ.লীগের পর বিএনপি নেতাদেরও সংহতি
- অসুস্থ হয়ে পড়ছেন শাবির অনশনকারী শিক্ষার্থীরা
- শাবি ভিসির পদত্যাগ দাবি প্রগতিশীল ছাত্রজোটের
- শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ শাবির সাবেক শিক্ষার্থী আইনজীবীদের
- শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সমাধান করুন: শাবি প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী
- শিক্ষার্থীদের দাবি ‘সংহতি’, শিক্ষকরা জানালেন ‘সহমর্মিতা’
- ‘আমরা চাষাভুষা নই’, শাবি শিক্ষিকার বক্তব্যে সমালোচনা
এর আগে বুধবার (১৯ জানুয়ারি) রাতে বাংলা বিভাগের মোজাম্মেল হক ও সমাজকর্ম বিভাগের দীপান্বিতা বৃষ্টি নামের দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের অ্যাম্বুলেন্সযোগে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে বুধবার বিকেল থেকে আমরণ অনশন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। ২৪ জন শিক্ষার্থী অনশনে অংশ নিয়েছেন। তারা ক্যাম্পাসে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি। বিভিন্ন হাসপাতালে যোগাযোগ করেও সাড়া মেলেনি। পরে ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে বৃহস্পতিবার সকালে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসককে নিয়ে আসা হয়। মানবিক কারণে তিনি ব্যক্তিগভাবে সাড়া দেন। এ চিকিৎসককে অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে।
অনশনরত শিক্ষার্থী জাহিদুল হাসান অপূর্ব বলেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন চালিয়ে যাবো। কোনো প্রতিবন্ধকতাই আমাদের টলাতে পারবে না। শুধু ওয়াশরুমের প্রয়োজন ছাড়া আমরা এই জায়গা থেকে উঠবো না। কোনো ধরনের খাবারও গ্রহণ করবো না।’
আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অনশনকারীরা দুর্বল হতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে চারজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমরা ভার্সিটির মেডিকেল সেন্টার থেকে কোনো সহায়তা পাইনি, অ্যাম্বুলেন্স পাইনি। রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগাযোগ করলে তারা সরাসরি বলে দেন, তারা এটার সঙ্গে যুক্ত হবেন না। আমরা মাউন্ট অ্যাডোরায়ও যোগাযোগ করি। তারা বলেন তাদের নাকি রিসোর্স নেই। ওসমানী হাসপাতালেও ফোন করা হয়। কিন্তু তারা ফোন রিসিভ করেননি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের একটাই দাবি, আমরা ভিসির পদত্যাগ চাই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অনশনকারীদের কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারপরও উপাচার্য গদি ছাড়ছেন না। এই ২৪ জনের কিছু হলে আরও ২৪ জন আসবে। এরপর আরও ২৪ জন। দেখি তিনি পদত্যাগ না করে কিভাবে থাকেন।’
প্রক্টরিয়াল বডি ও ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টার পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবি থাকলেও আন্দোলনকারী এখন উপাচার্যের পদত্যাগকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টায় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের জন্য বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। অন্যথায় আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন।
বুধবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তার পদত্যাগের অপেক্ষায় ছিলেন। তবে উপাচার্য পদত্যাগ না করায় শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আমরণ অনশন শুরুর সিদ্ধান্ত নেন।
বুধবার বিকেল ৩টা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশন শুরু করেন ১৫ ছেলে ও ৯ মেয়ে শিক্ষার্থী। অনশনে বসা শিক্ষার্থীরা হলেন-শাহরিয়ার আবেদিন, আবদুল্লাহ আল রাফি, রাকিব, ফয়জুর রহমান, আসিফ ইকবাল, কাজল দাশ, সাদিয়া নওরিন মিথিলা, জান্নাতুল নাইম নিশাত, জাহিদুল ইসলাম, এস এম আহসান উল্লাহ, আসাদুজ্জামান, মরিয়ম আক্তার, আবু রাকিব হাসানসহ আরও ১৩ জন।
অনশনকারী জাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা অনশন চালিয়ে যাবো। এতে যদি আমাদের মৃত্যু হয় তাহলে দায়ভার উপাচার্যের ওপরই বর্তাবে।’
এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল বিকেল ৪টায় প্রায় আড়াইশ শিক্ষকের সঙ্গে জুম মিটিং করেন উপাচার্য। মিটিং শেষে রাত ৮টার দিকে শতাধিক শিক্ষক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে তাদের আন্দোলন স্থগিত করার অনুরোধ করেন। তবে আন্দোলন স্থগিতে রাজি হননি শিক্ষার্থীরা।
শাবি উপাচার্য ফরিদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
যা ছিল এক হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের আন্দোলন, তা এখন রূপ নিয়েছে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের এখন একটাই দাবি, উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমদ লিজার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গত রোববার হামলা চালায় পুলিশ। তখন দুই পক্ষে সংঘর্ষ বাধে। এরপর থেকেই এ আন্দোলনের দাবি হয়ে ওঠে উপাচার্যের পদত্যাগ। সিরাজুন্নেসা হলের ছাত্রীদের সঙ্গে অন্য শিক্ষার্থীরাও তখন যুক্ত হন এই আন্দোলনে। এমনকি এর আগে ছাত্রীদের আন্দোলনে উপাচার্যের পক্ষে অবস্থান নেয়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও এখন উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে সরব।
পুলিশের হামলার ঘটনায় বিস্ফোরণ ঘটলেও উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি, ক্যাম্পাসে কোনো অনুষ্ঠান করতে বাধা প্রদান, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে কুমিল্লার লোকদের নিয়োগে প্রাধান্য, উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
মঙ্গলবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলাপ করে এসব অভিযোগের কথা জানা গেছে।
২০১৭ সালের আগস্টে প্রথম দফায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। ২০২১ সালের ৩০ জুন উপাচার্য পদে তাকে পুনর্নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।
উপাচার্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভের কারণ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়াসির সরকার বলেন, ‘উপাচার্য আমাদের কোনো দাবিকে আমলে নেন না। তার একক সিদ্ধান্তে সবকিছু চলে।’
উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ভবন তৈরি হচ্ছে। বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আশু সমস্যা সমাধানে উপাচার্য কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না।’
তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে আমরা ৪ দফা দাবিতে আন্দোলন করেছিলাম। এর অন্যতম ছিল প্রতিটি একাডেমিক ভবনে আলাদা রিডিং রুম করা। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা দাবি করেছিলাম সপ্তাহে সাত দিন পাঠাগার খোলা রাখার। সে দাবিও পূরণ হয়নি। এখন সপ্তাহে পাঁচ দিন পাঠাগার খোলা থাকে। শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকে। অথচ এই দুই দিন ক্লাস পরীক্ষা না থাকায় শিক্ষার্থীরা পাঠাগারে এসে পড়তে পারত।’
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের সব পথ বন্ধ করে দিয়েছেন উল্লেখ করে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমরা ক্যাম্পাসে রোড পেইন্টিং করতাম। এই উপাচার্য তা বন্ধ করে দেন। তিনি আমাদের গ্রাফিতি আঁকতে দেন না। দেয়াল লিখন নিষিদ্ধ করেছেন। সব কিছু নিষিদ্ধ করে তিনি স্বৈরাচারী কায়দায় বিশ্ববিদ্যালয় চালাচ্ছেন।’
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ হোসেন অপূর্ব বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ হাজার শিক্ষার্থী। তাদের খাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাফেটেরিয়া আছে মাত্র দুটি।’
তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে অনেক টং দোকান ছিল, যেগুলোয় শিক্ষার্থীরা খেতে পারতেন। কিন্তু করোনার পর থেকে উপাচার্য এগুলো বন্ধ করে দেন।
এর কারণ হিসেবে অপূর্ব বলেন, ‘টং দোকানে শিক্ষার্থীরা আড্ডা দিতেন। তারা একত্রিত হতে পারতেন। কিন্তু উপাচার্য তা চান না। শিক্ষার্থীরা একত্রিত হোক, তা তিনি পছন্দ করেন না। তিনি বরং শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন।’
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার দুটি সাইনবোর্ড নিয়েও ক্ষোভ দেখা দেয়। পাশাপাশি দুটি ক্যাফেটেরিয়ার একটিতে ‘সম্মানিত শিক্ষক/ কর্মকর্তাদের’ অন্যটিতে ‘শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের জন্য’ সাইনবোর্ড টানানো হয়। শুধু শিক্ষকদের আগে ‘সম্মানিত’ শব্দ ব্যবহার করে বৈষম্য করা হয়েছে অভিযোগ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থীরাও এ নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ক্ষোভের মুখে গত সপ্তাহে সাইনবোর্ড দুটি সরিয়ে নেয়া হয়।
উপাচার্যের কাছে শিক্ষার্থীরা কোনো অভিযোগ নিয়ে গেলে উল্টো হয়রানির শিকার হতেন জানিয়ে স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘আমরা কোনো দাবি বা অভিযোগ নিয়ে গেলে তিনি আমাদের রেজাল্ট দেখতে চান। রেজাল্ট খারাপ হলে তিনি আমাদের সঙ্গে আর কথাই বলেন না, বরং অপদস্ত করেন। বিভাগের শিক্ষকদের দিয়ে চাপ প্রয়োগ করান।’
তিনি বলেন, ‘আগে ছাত্রীরা রাত ১০টা পর্যন্ত হলের বাইরে থাকতে পারত। কিন্তু ফরিদ উদ্দিন দায়িত্ব নেয়ার পর ২০১৭ সালে ছাত্রীদের সন্ধ্যার পর হলের বাইরে থাকা নিষিদ্ধ করে দেন। এখন সন্ধ্যা হলেই প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ক্যাম্পাসে ঘুরে ঘুরে দেখেন কোনো ছাত্রী হলের বাইরে আছে কি না। কেউ বাইরে থাকলে তাকে হেনস্তা করা হয়। অনেক সময় অভিভাকদের কাছেও চিঠি পাঠানো হয়।’
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সাংস্কৃতিক আয়োজন করতে দিতেন না উল্লেখ করে পলিটিক্যাল স্ট্যাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী দীক্ষিতা তালুকদার বলেন, ‘তিনি আমাদের কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে দিতেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তন ব্যবহার করতে দিতেন না। কিছুদিন আগে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বারবিকিউয়ের আয়োজন করতে চেয়েছিল, তাতেও তিনি বাধা দিয়েছেন।’
এই ছাত্রী বলেন, ‘হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবি আদায়ে আমরা আন্দোলনে নামলে তিনি দাবি পূরণে এক সপ্তাহের সময় চান। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে তিনি এক ঘণ্টারও সময় নেননি। আচমকাই হল বন্ধের ঘোষণা দিয়ে দেন। তার নির্দেশে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। এমন স্বৈরাচারী ও ব্যর্থ উপাচার্য আমরা চাই না।’
উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অন্যতম নেতা সাব্বির আহমদ অভিযোগ করে বলেন, ‘এই উপাচার্য আমাদের ঐক্য নষ্ট করেছেন। আমরা যতবার দাবি নিয়ে দাঁড়িয়েছি, ততবার তিনি আমাদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে হয়রানি করেছেন। তার কাছে আমরা আমাদের কোনো অধিকার নিয়ে কথা বলতে পারি না।’
গত বৃহস্পতিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমদ লিজার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের ছাত্রীরা। তখন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতারা তাদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি শনিবার সন্ধ্যায় আন্দোলনকারী ছাত্রীদের উপর ছাত্রলীগ হামলা চালায় বলেও অভিযোগ আছে।
তবে এখন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও যোগ দিয়েছেন উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে। মঙ্গলবার উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ চেয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল করে ছাত্রলীগের একটি অংশ। এ ছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভেও শরিক হয়েছেন ছাত্রলীগের অনেকে।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি নেই দীর্ঘদিন ধরে। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় গত বছরের ১৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এরপর আর নতুন কমিটি দেয়া হয়নি। ক্যাম্পাসে এখন ছাত্রলীগের অন্তত ছয়টি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে।
এই গ্রুপিং জিইয়ে রাখার পেছনেও উপাচার্যের ইন্ধন রয়েছে অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রলীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘উপাচার্যের কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি আসছে না। তিনি ছাত্রলীগকে কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত করে রেখেছেন। কমিটি দিলে ঝামেলা হবে এমনটি বুঝিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের।’
তার অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। এসবে ব্যাপক লুটপাট হচ্ছে। লুটপাট অব্যাহত রাখা ও নিজের ক্ষমতা একচ্ছত্র করতে ছাত্রলীগের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করেছেন ফরিদ উদ্দিন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যেও বিভক্তি জিইয়ে রাখার অভিযোগ রয়েছে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে।
তবে উপাচার্যের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগের সত্যতা থাকলেও তিনি কিছু ভালো কাজও করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস পরীক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। সেশনজট তৈরি হয়েছে। কিন্তু আমাদের এখানে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরপরই পরীক্ষা শুরু হয়েছে। নতুন সেমিস্টারের ক্লাসও শুরু হয়েছে। সেশনজট অনেকাংশে কমে এসেছে। যারা পরীক্ষা দিতে চান না, তারা উপাচার্যের ওপর ক্ষুব্ধ।’
তিনি বলেন, ‘উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং বন্ধ করেছেন। এ কারণেও কেউ কেউ তার ওপর নাখোশ। তাদের দাবি, র্যাগিংয়ের মাধ্যমে সিনিয়র-জুনিয়র শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের তিনটি গ্রুপ রয়েছে। এগুলো হলো- আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’, আওয়ামী-বামপন্থি শিক্ষকদের প্যানেল ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তচিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ ও বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় মূল্যবোধে শ্রদ্ধাশীল শিক্ষক ফোরাম’।
নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে শিক্ষকদের এই দ্বন্দ্ব জিইয়ে রাখার অভিযোগ রয়েছে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে। তবে এ ব্যাপারে কোনো কোনো শিক্ষক প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ‘তিনি খুব অহংকারী। কাউকে মূল্যায়ন করেন না। তিনিকে প্রধানমন্ত্রীর কাছের লোক বলে পরিচয় দেন।’
তিনি বলেন, ‘উপাচার্যের বাড়ি কুমিল্লায়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে কুমিল্লাকরণ করছেন নিয়োগ ও বিভিন্ন দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে নিজ এলাকার লোকদের গুরুত্ব দিয়ে।’
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের সঙ্গে মঙ্গলবার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। বাসবভন অবরোধ করে তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। ফলে তার সঙ্গে দেখা করা যায়নি।
সোমবার উপাচার্য বলেছিলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মান অনেক উন্নত হয়েছে। করোনাকালেও আমরা অনেক ভালো করেছি। এখন কিছু বহিরাগতের ইন্ধনে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। বহিরাগতরাই এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে।’
How to register at Dafabet for legal betting in the US - Legalbet
ReplyDeleteThe dafabet US 다파벳 legal betting market has one of the most popular types of bet types for the US. The sports betting industry has a ボンズ カジノ great variety of markets and