সিলেটে পানি বন্দি লাখো মানুষ

গত কয়েক দিনের অবিরাম বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বন্যাকবলিত হয়েছেন সিলেট। এক মাসের মাথায় ফের বন্যার কবলে পড়েছে সিলেট জেলা ও মহানগরীর অধিকাংশ জনপদ। এরমধ্যে চরম দূর্ভোগ ও সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় পড়েছেন সদর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দারা। এসব এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়েছে পানি। তাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও সেখানে তারা পৌঁছাতে পারছেন না। আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা নিরাপদ স্থানে যেতে এসব এলাকার বাসিন্দারা আর্তনাদ জানাচ্ছেন। এছাড়াও খাবার ও বিশুদ্ধ পানির জন্য চলছে হাহাকার।

রাস্তাঘাট পানিতে সম্পূর্ণ তলিয়ে যাওয়ায় লাখো বানভাসী মানুষকে উদ্ধারের জন্য সেখানে পৌঁছাতে পারছেন না কেউ। এছাড়াও এসব গ্রামীন এলাকায় পৌঁছাতে নৌকা মিলছে না। বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) রাত সাড়ে এগারোটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবস্থা আরও ভয়াবহের দিকে যাচ্ছিল বলে খবর পাওয়া গেছে।

সিলেটে এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফা বন্যায় অসহায় হয়ে পড়েছেন মানুষ। খাবার, বিশুদ্ধ পানির জন্য চলছে হাহাকার। পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার পাঁচ উপজেলার বিস্তৃর্ণ জনপদ। লাখ লাখ মানুষ হয়ে পড়েছেন পানিবন্দি। অব্যাহত বৃষ্টিপাত ও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড।

গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে সিলেট নগরীতে সুরমা নদীর পানি প্রবেশ শুরু করে। সুরমার সাথে সংযুক্ত ছড়া ও খাল দিয়ে নদীর পানি প্রবেশ শুরু হয়। কয়েকটি স্থানে নদীর তীর উপচেও পানি ঢুকে নগরীতে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বন্যা আক্রান্ত এলাকার মানুষ। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় স্কুল কলেজে যেতে পারেননি শিক্ষার্থীরা। আগামী ১৯ জুন থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষা নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অভিভাবকরা।

বন্যা আক্রান্ত এলাকার বাসা-বাড়ির পানির রিজার্ভার ট্যাংক বন্যায় তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যা কবলিতদের জন্য নগরীতে ৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে সিটি করপোরেশন। তবে এসব বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা সংকুলান হচ্ছে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট ও সিলেট পয়েন্টে যথাক্রমে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া আমলসীদ, শেওলা ও শেরপুর পয়েন্টেও পানি বৃদ্ধি পাওয়া অব্যাহত রয়েছে। সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া লোভা ও ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত রয়েছে। 

সারি ও পিয়াইন নদীর পানি বেড়ে জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। দ্বিতীয় দফা বন্যায় দিনমজুর ও খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষের ঘরে ঘরে চলছে হাহাকার। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার সবকিছু তলিয়ে গেছে পানিতে। উপজেলার সকল সড়ক ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে গোয়াইনঘাট। বিভিন্ন স্থানে বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাও ভেঙ্গে পড়েছে।

কোম্পানীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। ধলাই নদীর পানি ঢুকে পুরো উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। আগেরবার বন্যায় সিলেট-ভোলাগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মহাসড়কে পানি না উঠলেও এবার তলিয়ে গেছে। মহাসড়কের উপরে কোথাও এক ফুট, আবার কোথাও তার চেয়ে বেশি পানি উঠেছে। বন্যার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে শত শত পাথর ভাঙ্গার মেশিন। বেকার হয়ে পড়েছে শ্রমিকরা।

জৈন্তাপুর উপজেলায়ও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। সিলেট-তামাবিল সড়ক ছাড়া বাকি সকল সড়ক ও গ্রামীণ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। সারি ও পিয়াইন নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার অধিকাংশ এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। সুরমা ও লোভা নদীর পানি বাড়ায় কানাইঘাট উপজেলায়ও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad